হযরত ফাতিমা (রা.) (পাঠ ৬)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা আদর্শ জীবনচরিত | - | NCTB BOOK
74
74

পরিচয়

হযরত ফাতিমা ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর কনিষ্ঠ কন্যা। তাঁর মাতা ছিলেন হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)। তিনি নবুয়তের ৫ বছর পূর্বে ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকাল থেকে তিনি ছিলেন তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্না ও সৎ চরিত্রের অধিকারিণী।

তিনি যাহরা (অনিন্দ্য সুন্দরী, পরমা লাবন্যাময়ী) ও বাতুল (পবিত্র, সংসারে অনাসক্ত) উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। বদরের যুদ্ধের পর হিজরি দ্বিতীয় সনে হযরত আলি ইবনু আবু তালিবের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। বিবাহের দেন মোহর ছিল ৪৮০ - ৫০০ দিরহাম (মুদ্রা)।

সরল জীবনযাপন

হযরত ফাতিমা (রা.) খুব সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। তাঁর স্বামী হযরত আলি (রা.) দরিদ্র হলেও তাঁর কোনো দুঃখ ছিল না। হযরত আলি (রা.) পরিশ্রম করে যা অর্জন করতেন তা দিয়ে তিনি সংসার চালাতেন। কখনো কখনো অনাহারে-অর্ধাহারে তাঁর দিন অতিবাহিত হতো। তিনি ত্যাগ স্বীকার করতেন কিন্তু কখনো ধৈর্য হারাতেন না। এমনকি তাঁর চেহারায়ও কষ্টের কোনো ছাপ দেখা যেত না। তিনি নিজ হাতে সংসারের সকল কাজ করতেন। তাঁর কোনো চাকরানী ছিল না। জাঁতা পিষা ও বালতি দিয়ে পানি উঠানোর ফলে তার হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। তিনি সবসময় সাজসজ্জা ও জাঁকজমক পোশাক পরিহার করে চলতেন।

দানশীলতা

হযরত ফাতিমা (রা.) দানের ব্যাপারে ছিলেন খুবই উদার। দান করার সময় তিনি যে অভাবী তা বোঝা যেত না। খালি হাতে কেউ তাঁর নিকট থেকে ফেরত যেত না। বর্ণিত আছে, একদা তিনি খাবারের লোকমা মুখে তুলছিলেন, এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে বলল, 'হে নবি কন্যা! আমাকে ভিক্ষা দিন। গত তিন দিন যাবৎ আমি অনাহারে আছি।' তিনি তাঁর খাবারটুকু ভিক্ষুককে দিতে পুত্র হাসানকে নির্দেশ দিলেন। এতে হাসান (রা.) আপত্তি জানিয়ে বললেন, আম্মা! গতকাল হতে আপনি কিছুই খাননি। আপনি এ খাবার খেয়ে নিন। উত্তরে তিনি পুত্র হাসানকে বললেন, 'এটা ভুল হবে। আমি মাত্র একদিন অভুক্ত আছি, আর এ ফকির তিন দিন ধরে কোনো কিছু খায়নি।'

পিতৃভক্তি

ছোটবেলা হতে হযরত ফাতিমা (রা.) তাঁর পিতার প্রতি অনুরাগী ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ইন্তিকালের পূর্বে তিনি হযরত ফাতিমা (রা.)-কে ডাকলেন, কানে কানে কী যেন বললেন, সাথে সাথে হযরত ফাতিমা (রা.) কান্নায় ভেঙে পড়লেন। পুনরায় মহানবি (স.) তাঁকে কাছে ডেকে কী যেন বললেন, তাতে তিনি হাসতে লাগলেন। হযরত আয়েশা (রা.) তাঁকে হাসি-কান্নার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আব্বাজান প্রথমে আমাকে জানিয়েছেন 'মা আমার আর সময় নেই, আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাব'। আর দ্বিতীয়বার আমাকে জানিয়েছেন, 'পরিবারের সকলের মধ্যে আমিই তাঁর [মুহাম্মদ (স.)] সাথে প্রথমে মিলিত হবো।' হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ইন্তিকালের পর তাঁর জীবনে শোকের ছায়া নেমে আসে। এরপর তিনি যত দিন বেঁচে ছিলেন কখনো মুচকি হাসি হাসেননি।

স্বভাব-চরিত্র

হযরত ফাতিমা (রা.) হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সকল গুণই অর্জন করেছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ, লজ্জাশীল, পরোপকারিণী, ধৈর্যশীল ও আল্লাহর উপর অধিক আস্থাশীল। হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন, 'ফাতিমা আমার দেহের এক অংশ, যে তাঁকে নারাজ করবে, সে আমাকে নারাজ করবে।' (বুখারি)
তিনি আরও বলেন, 'ফাতিমা হলেন জান্নাতবাসী মহিলাদের নেত্রী।' (বুখারি)। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, 'আমি ফাতিমার তুলনায় স্পষ্টভাষী ও সত্যবাদী কাউকে দেখিনি। তবে তাঁর পিতার কথা স্বতন্ত্র।' (আল-ইস্ট্রি'য়াব)

সন্তান-সন্ততি

হযরত ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে ৫ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা হলেন হযরত হাসান (রা.), হযরত হোসাইন (রা.), হযরত মুহসিন (রা.), হযরত উম্মে কুলসুম (রা.) ও হযরত যয়নব (রা.)। হযরত মুহসিন (রা.) বাল্যকালে মৃত্যুবরণ করেন।

ইন্তিকাল

হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত ফাতিমা (রা.) ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এগারো হিজরির তৃতীয় রমযান মঙ্গলবার তিনি ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৯ বছর। হযরত ফাতিমা (রা)-কে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। সুন্দর চরিত্র, পিতৃভক্তি, অকৃত্রিম স্বামী সেবা, দানশীলতা ও লজ্জাশীলতা হযরত ফাতিমা (রা.)-কে বিশ্ব নারী জাতির ইতিহাসে মহীয়সী করে রেখেছে।

দলগত কাজ: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর চারিত্রিক গুণাবলির তালিকা তৈরি করবে।
Content added By
Promotion